শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

এমপি দুর্জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ

এমপি দুর্জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ

শহিদুল ইসলাম:

মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য-প্রমাণাদি পেয়েছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা এবং অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য কমিশনের কাছে এটি উপস্থাপন করবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কমিশনের বৈঠকে এমপি দুর্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগটি কমিশনের আলোচ্যসূচিতে থাকতে পারে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, মানিকগঞ্জের মো. জামাল উদ্দিন, সুরাইয়া খানম, আক্তারা বেগম, এনামুল করিমসহ ১৪৪ জন যৌথভাবে একটি অভিযোগ উপস্থাপন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক বিষয়টি অতীব জরুরী এবং এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়।

গত জানুয়ারি মাসে এই লিখিত অভিযোগ দেন জামাল উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্টরা। এই অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, বিভিন্ন প্রকার চাকরি দেওয়ার নাম করে মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে সমস্ত চাকরির জন্য নাইমুর রহমান দুর্জয় টাকা নিয়েছেন বলে ওই সমস্ত লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- পুলিশের এসআই নিয়োগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন নিয়োগ।

এসমস্ত নিয়োগে চাকরি দেওয়ার নাম করে নাইমুর রহমান দুর্জয় এবং তার ঘনিষ্ঠরা সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে পনের লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে তাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। তাঁরা যখন টাকা ফেরতের জন্য গিয়েছেন তখন নাইমুর রহমান দুর্জয় এবং তার ঘনিষ্ঠরা এই সমস্ত লোকজনকে অপমান করেছে, কোথাও কোথাও তাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জে বিভিন্ন থানায় হয়রানিমূলক মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলে তারা লিখিত চিঠিতে অভিযোগ করেছেন।

একই চিঠির অনুলিপি দুর্নীতি দমন কমিশনেও দেওয়া হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁর আইন অনুযায়ী এই বিষয়টি অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে ১৪১ জন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতারিত ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ১৪১ জনের মধ্যে ৭৯ জন প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য-প্রমাণ দিতে পেরেছেন যাতে টাকা লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। আর এই সমস্ত অভিযোগ গুলোই শুধু আমলে নেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন এই সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগগুলোকে যাচাই-বাছাই করে এবং একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। এই প্রতিবেদনটিতে সুপারিশ করা হয়েছে যে, এই বিষয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান প্রয়োজন এবং সুনির্দিষ্ট মামলা করা প্রয়োজন। দমন কমিশনের আইন অনুযায়ী এ ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধান করতে গেলে কমিশনের অনুমোদন লাগে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে যে, ৭৯ জনের যে অভিযোগ তাতে টাকার অংক প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। বাকিরা সাক্ষ্য দেননি বা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি বলে সেটি আমলে নেওয়া হয়নি। তবে মামলার চূড়ান্ত তদন্তে যদিও এ ব্যাপারে আরও যাচাই-বাছাই করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয় সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |